মাদকাসক্তির চিকিৎসা একটি জটিল প্রক্রিয়া যা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী এবং সমন্বিত পদ্ধতি অনুসরণ করে। এটি একটি পুনরায় আসক্তিমূলক মস্তিষ্কের রোগ (A chronic relapsing brain disease) হিসেবে বিবেচিত, তাই সুস্থতার পরও আবার আসক্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে।
মাদকাসক্তির চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি (Core Objectives and Methods of Drug Addiction Treatment)
- দৈহিক ও মানসিক সুস্থতা: রোগীর শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি আচরণগত পরিবর্তন এবং নৈতিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটানো।
- আচরণ পরিবর্তন: মাদক থেকে দূরে থাকতে আচরণ ও চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন আনা, যা দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্ভব।
- জীবন দক্ষতার প্রশিক্ষণ: জীবনের সাধারণ সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য রোগীকে প্রস্তুত করা।
- সমন্বিত চিকিৎসা: শুধুমাত্র ঔষধনির্ভর বা পুনর্বাসনকেন্দ্রিক চিকিৎসা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রয়োজন।
চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়সমূহ (Important Phases of Treatment)
মাদকাসক্তির চিকিৎসায় সাধারণত চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা হয়:
১. রোগ নির্ণয় বা অ্যাসেসমেন্ট (Assessment)
- রোগীর সার্বিক তথ্য সংগ্রহ: পরিপূর্ণ চিকিৎসার জন্য রোগীর সমস্যা এবং সমস্যা সম্পর্কিত সার্বিক তথ্য বিশেষজ্ঞের জানা জরুরি।
- পরীক্ষা-নিরীক্ষা: রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং মাদকের উপর নির্ভরতা নির্ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরীক্ষা (যেমন, ডোপ টেস্ট, রক্ত পরীক্ষা) করা হয়।
২. ডিটক্সিফিকেশন বা বিষমুক্তকরণ (Detoxification)
- টক্সিন অপসারণ: রোগীর শরীর থেকে মাদকের কারণে জমা হওয়া বিষাক্ত পদার্থ (টক্সিন) বের করে দেওয়া।
- উইথড্রয়াল লক্ষণ মোকাবিলা: নেশার টান এবং উইথড্রয়াল সিনড্রোম (withdrawal symptoms) বা মাদক প্রত্যাহারের কষ্টকর শারীরিক ও মানসিক উপসর্গগুলি ঔষধ এবং চিকিৎসা সহায়তার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এটি সাধারণত চিকিৎসাপদ্ধতির একটি অপরিহার্য অংশ।
৩. প্রাথমিক চিকিৎসা ও পুনর্বাসন (Primary Treatment and Rehabilitation)
- ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরিকল্পনা: ডিটক্সিফিকেশন পর্ব শেষ হলে রোগীর জন্য চিকিৎসা কর্মকর্তা ও কাউন্সেলরদের সমন্বয়ে একটি ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করা হয়।
- কাউন্সেলিং ও সাইকোথেরাপি: প্রশিক্ষিত দক্ষ কাউন্সেলরের অধীনে কাউন্সেলিং গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- ব্যক্তিগত কাউন্সেলিং (Individual Counseling): রোগীর জীবনের ভুলত্রুটি কাটিয়ে ওঠা, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ব্যক্তিগত মানসিক উৎকর্ষতা সাধনের লক্ষ্যে সহায়তা করা হয়।
- দলগত থেরাপি (Group Therapy): একই ধরণের সমস্যার সম্মুখীন অন্যদের সাথে অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে সহায়তা লাভ।
- আচরণগত থেরাপি (Behavioral Therapy): রোগীর আচরণ এবং চিন্তাভাবনার পরিবর্তন আনা, যা মাদকমুক্ত থাকার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
- পারিবারিক সম্পর্ক উন্নয়ন: পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সহায়তা প্রদান।
- আবাসিক পুনর্বাসন: অনেক ক্ষেত্রে ৪ থেকে ৬ মাস বা তার বেশি সময়ের জন্য আবাসিক পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।
৪. ফলো-আপ বা নেশার কবলে পড়া প্রতিরোধ (Follow-up or Relapse Prevention)
- রিল্যাপ্স প্রতিরোধ: চিকিৎসা শেষ হওয়ার পর আবার নেশাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা (রিল্যাপ্স) থাকে। এর সঠিক মোকাবিলা করতে প্রাথমিক চিকিৎসার সঙ্গে সমানতালে নজরদারি প্রয়োজন।
- নেশার টান এড়ানো: রোগীকে নিজেই নেশার টান এড়িয়ে যেতে শেখানো হয়।
- আফটারকেয়ার প্রোগ্রাম (Aftercare): আবাসিক চিকিৎসা শেষে রোগী যেন মাদকমুক্ত থাকতে পারে, তার জন্য কয়েক মাস ধরে ফলো-আপ বা পরিচর্যার ব্যবস্থা (যেমন, সেফ হাউস প্রোগ্রাম, আউট-পেশেন্ট সার্ভিস) রাখা হয়।

হটলাইন নং: 01670847335